রাষ্ট্রবাদী রবীন্দ্রনাথ

: কল্যাণ গৌতম

রবীন্দ্রনাথের অনুভবে ভারতবর্ষের মর্যাদা কোথায় তার একটি উদাহরণ দিই। রবীন্দ্রনাথ তখন ইংল্যান্ডের কেনসিংটনে রয়েছেন। কবিবন্ধু ডি. এল রায়ের পুত্র দিলীপ কুমার রায়ও সেখানে উপস্থিত। দু’জনে গল্প করছেন। এমন সময় কয়েকজন ভারতীয় যুবক এলেন কবির কাছে এবং কবিকে অনুরোধ করলেন, জালিয়ানওয়ালাবাগে জেনারেল ডায়ারের গুলিতে প্রাণ বিসর্জন দেওয়া নরনারীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় তাঁকে সভাপতিত্ব করতে হবে৷ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে কবি তৎক্ষণাৎ বললেন, তোমাদের একটুও লজ্জা করে না? পশুর মতো মার খেয়েছি, হামাগুড়ি দিয়ে অনেকে প্রাণ বাঁচিয়েছি — সেই গ্লানির কথা, সেই চরম অপমানের কথা হাটে-বাজারে বৃহৎ গলায় প্রচার করবে? এটা কি আন্দোলনের সাফল্য হতে পারে? ইংল্যান্ডের মানুষ বলবে, যারা পাশবিক অত্যাচার এবং নির্যাতন সত্ত্বেও মুখ বন্ধ করে থাকে, আর্তনাদ করে হামাগুড়ি দিয়ে প্রাণ বাঁচায়, তারা অমানুষ এবং জন্তু। অতএব তাদের গুলি করে মারা ঠিক হয়েছে। তিনি আরও বললেন, এই ঘটনা ভারতবাসীর ভয়ঙ্কর গ্লানি, তা ঢাক পিটিয়ে কোমর বেঁধে প্রচার করার নয়। বললেন, সেই ঢাকিদের দলে তাঁকে ভর্তি করার মিথ্যা চেষ্টা যেন না করা হয়। কবির মুখ রাগে রাঙা হয়ে উঠেছিল সেদিন।

অথচ এই কবিই তো ১৯১৯ সালের মে মাসে জালিয়ানওয়ালাবাগের প্রকৃত সংবাদ অবগত হয়ে, অ্যান্ড্রুজের মাধ্যমে গান্ধীজির প্রতি দৌত্যে ব্যর্থ হয়েছিলেন। গান্ধীজি-রবীন্দ্রনাথ একত্রে আইন অমান্য করে পাঞ্জাবে প্রবেশ করবেন এবং গ্রেপ্তার বরণ করবেন — সেই ইচ্ছায় বাঁধা পেয়েছিলেন।সেদিন চিত্তরঞ্জন দাশের প্রতিবাদ-উদাসীনতাতে ব্যথিত হয়ে নিজেই প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন। ব্রিটিশ-প্রদত্ত ‘নাইটহুড‘ (স্যার টাইটেল) ত্যাগ করে প্রতিবাদ-পত্র লিখেছিলেন ভাইসরয় লর্ড চ্যামসফোর্ডকে। আর এই প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে আপন মনের কাঁটা উপড়িয়ে ফেলেছিলেন। তিনি বহুকোটি ভারতবাসীর প্রতিবাদকে বাণীদান করেছিলেন। অতএব কেনসিংটনে কবির মনস্তত্ত্ব আন্দাজ করে বলতে পারি, যদি জালিয়ানওয়ালাবাগের সেই বুলেটবিদ্ধ জাতি বুলেটের শেল ভেতর থেকে উদগীরণ করে ব্রিটিশের ঔদ্ধত্যকে ফিরিয়ে দিতে না পারে, তবে তা দেশবাসীর পরাজয়ের পরাকাষ্ঠা হয়েই চিহ্নিত হয়ে থাকবে। দেশবাসী দেখেছে ২৬ শে এপ্রিল, ১৯১৯ পাঞ্জাবের খবর রবীন্দ্রনাথের কানে আসবার পর তিনি প্রকৃত সত্য জানতে খবর নিতে সি. এফ. অ্যান্ড্রুজকে দিল্লি পাঠিয়েছেন। চিঠির লেনদেনও হয়েছিল। সেই সূত্রে ‘প্রবাসী‘ পত্রিকা সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছিলেন, জানিয়েছিলেন মনের তাপমানযন্ত্রের কথা। অ্যান্ড্রুজ দিল্লি হয়ে পাঞ্জাব প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কবির অনুরোধে তিনি গান্ধীর সঙ্গে দেখা করতে বোম্বাই গিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ মনোরথ হয়ে শান্তিনিকেতনে ফিরে আসতে হয়েছিল। ব্যথিত কবি পাঞ্জাবে অবস্থানকারী রবীন্দ্র-স্নেহধন্য লেডি রাণু মুখার্জীকে চিঠিতে জানিয়েছিলেন, “আকাশের তাপ আমি একরকম সইতে পারি। মর্ত্যের প্রতাপ আর সহ্য হয় না।… এই দুঃখের তাপ আমার বুকের পাঁজর পুড়িয়ে দিলে।” এই হলেন রাষ্ট্রবাদী রবীন্দ্রনাথ! কবির তখন বয়স প্রায় ষাট।

এবার জেনে নিই রবীন্দ্রনাথের ছোটোবেলাকার কথা। পৃথ্বীরাজের পরাজয় কাঁদিয়েছিল ‘হিন্দুমেলা’-র আয়োজক-পরিবারের ছোট্ট রবি-কে। তখন তাঁর উপনয়ন হয়ে গেছে। হিমালয় ভ্রমণের পূর্বে এক বালক-অবসরে তিনি লিখলেন ‘পৃথ্বীরাজের পরাজয়’ নামে এক বীররসাত্মক কাব্য। যদিও সেই কাব্যগ্রন্থের পান্ডুলিপি পরে আর পাওয়া যায় নি। কী ছিল সেই কাব্যে? কেন শিশু রবি পরাজিত হিন্দু রাজা পৃথ্বীরাজকে নিয়ে এমন কাব্য রচনা করতে গেলেন? রবীন্দ্র জীবনীকার প্রশান্ত কুমার পাল এ প্রসঙ্গে লিখছেন, “জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ীর স্বাদেশিকতার আবহাওয়া এবং হিন্দুমেলার হিন্দু জাতীয়তা-বোধের আদর্শে পরিবর্ধিত রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে হিন্দু রাজা পৃথ্বীরাজের বীরত্ব উজ্জ্বল ভাবে দেখা দেবে এবং তাঁর পরাজয়ে বেদনা অনুভব করবেন এটাই স্বাভাবিক।” তাঁর কিশোর মনে তুর্কী সম্রাট মহম্মদ ঘোরী কর্তৃক পৃথ্বীরাজের পরাজয় ছিল একটা গভীর-ঘন বেদনা, যা কোনোদিনই তিনি ভুলতে পারেন নি। আর এই কিশোর-বেদনাই রবীন্দ্রনাথের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করেছে হিন্দু-ইতিহাস-চেতনায় এবং তা থেকেই ক্রমান্বয়ে জাগ্রত হয়েছিল কবির দেশপ্রেম, রাষ্ট্রবোধ। তাঁর নানান লেখার মধ্যে পরতে পরতে, থরে-বিথরে ছড়িয়ে আছে হিন্দু সনাতনী-সংস্কৃতির মেজাজ। সাহিত্যে যা যা চিত্রকল্প আঁকলেন তিনি, তা হিন্দু সমাজেরই নানান পরিব্যাপ্তি। বৌদ্ধ, শিখ, জৈন সম্প্রদায়কেও তিনি বৃহত্তর হিন্দু সমাজের সঙ্গেই গ্রহণ করেছেন, লালন করেছেন। একথা কেউই অস্বীকার করতে পারেন না।

আমরা দেখতে পাই হিন্দু মেলার প্রবর্তনের মধ্যে (১৮৬৭ সালের চৈত্রসংক্রান্তি) ছিল ভারতবাসীর জাতীয় পরাভবের গ্লানি থেকে এবং ব্রিটিশ শাসন-শোষণ থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে এবং রবীন্দ্রনাথের মধ্যেও প্রবহমান ছিল হিন্দু স্বাদেশিকতার ভাব। আমরা জানি রবীন্দ্রনাথের স্বদেশ ভাবনা ছিল অনন্য। ১৪ বছর বয়সেই তিনি লিখছেন ‘হিন্দুমেলার উপহার’। ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে স্বদেশী গান রচনা করতে শুরু করলেন। স্বদেশব্রতের এক নির্ভীক প্রতিবাদী ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠলেন। ব্রিটিশ সরকারের দমন-পীড়ন-সন্ত্রাস-হিংস্রতার বিরুদ্ধে তিনি উচ্চারণ করলেন প্রতিবাদ এবং ধিক্কার। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় (১৯০৫) যখন তাঁর বয়স ছিল ৪৪ বছর, তখনই তাঁর স্বদেশী গানের সমৃদ্ধতম সময়। কখনও প্রত্যক্ষে, কখনও নেপথ্যে তিনি ভারতের মুক্তি সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর স্বদেশ গৌরবী-গান রচনার ও জনপ্রিয়তা তারই অনুষঙ্গে বিচার করতে হবে। তাঁর ‘স্বদেশ’ পর্যায়ের গানের সংখ্যা ৪৬। তিনি বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বন্দেমাতরম’ গানে সুর দিয়ে তাঁকেই শুনিয়েছিলেন ১৮৮৬ সালে। এই গানটি রবীন্দ্রনাথ কংগ্রেসের অধিবেশনেও গেয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের ৫০ বছর বয়সে লেখা গান ‘জনগণমন অধিনায়ক জয় হে’ আজ ভারতের জাতীয় সঙ্গীত। ২৭ তম কংগ্রেস অধিবেশনে গানটি গাওয়া হবে, তাই রবীন্দ্রনাথ এই গানটি লিখেছিলেন। ১৯৩৬ সালের ২৮ শে অক্টোবর কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি এই গানকে জাতীয় সঙ্গীতের স্বীকৃতি দেন।

রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রভাবনার অন্যতম দিক হচ্ছে ঐতিহ্যের অনুবর্তন। রবীন্দ্রনাথ রামায়ণে জারিত ছিলেন। তাই তিনি বুঝেছিলেন, শিশুপাঠ্যে শিশুকে সবসময় নিজের দেশের ঐতিহ্যের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে দিতে হবে। ঐতিহ্যের শিক্ষার মধ্যেই সবচাইতে ভালোভাবে শিক্ষিত করা সম্ভব দেশবাসীকে। তাদের যথোপযুক্ত নাগরিক হয়ে উঠতে সহায়তা করে দেশ এবং ঐতিহ্য। ঐতিহ্যের প্রতি টান, ঐতিহ্য-বিষয়ক জ্ঞান একেবারে ছোটোবেলা থেকেই আসা দরকার। রবীন্দ্রনাথ বুঝিয়েছেন ‘রাম’ বলতেই ভারতীয় শিশুর কাছে এক অমোচ্য চিত্র ফুটে ওঠা দরকার। সেই অনুষঙ্গে তিনি দু’ভাবে শিশুকে রামায়ণের সঙ্গে সংপৃক্ত করে দিচ্ছেন, নাম-বাচক শব্দে এবং প্রকৃতি চিত্রণে। কখনো নাম না বলেই শিশু রামায়ণে পাড়ি দিয়েছে — “মা গো, আমায় দেনা কেন/একটি ছোটো ভাই –/দুইজনেতে মিলে আমরা/বনে চলে যাই।” এখানে নাম না করেও শিশু নিজের সঙ্গে শ্রীরামকে অভেদ কল্পনা করছে, ছোটো ভাইটি যে সহোদর লক্ষ্মণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রকৃতি চিত্রণেও রামের বনবাস জীবন শিশুর কল্পনার নাগালে মুহুর্তেই চলে আসে — “চিত্রকূটের পাহাড়ে যাই/এমনি বরষাতে…”। রাজপুত্রের বনবাসী হয়ে যাওয়া বাঙ্গালি তথা ভারতীয় শিশুর মানস-কল্পনায় কতটা প্রভাব এনেছিল, ‘সহজপাঠ’-এর একটি কবিতায় কবি তা এক লহমায় ধরে দিয়েছেন — “ঐখানে মা পুকুরপাড়ে /জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে/হোথায় হব বনবাসী –/কেউ কোত্থাও নেই।/ঐখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধবো তোমার ছোট্ট কুঁড়ে,/শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে/থাকব দুজনেই।” এই শিকড়-সংস্কৃতির সাধনা রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রভাবনার উল্লেখযোগ্য দিক। অযোধ্যার রঘুপতি রাম-কে তিনি কোন উচ্চতায় রেখেছিলেন, তার প্রমাণ এই কবিতাটি —
“. . . কহো মোরে, বীর্য কার ক্ষমারে করে না অতিক্রম,
কাহার চরিত ঘেরি সুকঠিন ধর্মের নিয়ম
ধরেছে সুন্দর কান্তি মাণিক্যের অঙ্গদের মতো,
মহৈশ্বর্যে আছে নম্র, মহাদৈন্যে কে হয় নি নত,
সম্পদে কে থাকে ভয়ে, বিপদে কে একান্ত নির্ভীক,
কে পেয়েছে সব চেয়ে, কে দিয়েছে তাহার অধিক,
কে লয়েছে নিজ শিরে রাজভালে মুকুটের সম
সবিনয়ে সগৌরবে ধরা মাঝে দুঃখ মহত্তম ——-
কহো মোরে সর্বদর্শী হে দেবর্ষি তাঁর পুণ্য নাম।”
নারদ কহিলা ধীরে, “অযোধ্যার রঘুপতি রাম।”

আমরা দেখেছি, রবীন্দ্র-প্রতিভা বহুমুখী। রবীন্দ্রনাথ অবশ্য নিজে লিখেছেন, “….শিক্ষাসংস্কার এবং পল্লীসঞ্জীবনই আমার জীবনের প্রধান কাজ’। এই পল্লী সঞ্জীবনের মধ্যে প্রকৃতি কবিকে আকর্ষণ করছে সবচাইতে বেশি। এই প্রকৃতির সামীপ্যে থেকেই তাঁর রাষ্ট্রভাবনা গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়েছে। প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকা মানুষের জন্যও ভাবতে শুরু করলেন। ভাবনা শুরু হল কৃষির উন্নতির লক্ষ্যে। প্রকৃতি-যাপনের মধ্যে দেশের মাটিতে মাথা ঠেকালেন। সেই অনুষঙ্গে কৃষিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার করার রবীন্দ্র-মানস ছড়িয়ে গেল। হাতে-কলমে কৃষিশিক্ষা ও আদর্শ গ্রাম তৈরির পরিকল্পনায় জড়িয়ে গেলেন তিনি। দেশের মাটি ও মানুষের উন্নয়নের জন্যই ১৯০৬ সালে পুত্র রথীন্দ্রনাথকে আমেরিকার ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষিবিজ্ঞান পড়াতে পাঠালেন। শান্তিনিকেতন শ্রীময়ী রূপ পেল রবীন্দ্রনাথের জন্যই। গ্রাম জীবনকে তন্ন তন্ন করে খুঁজতে গিয়ে দেশ-দেখা হতে লাগল, খুলে গেল মর্মচক্ষু। ১৯২১ সালে কৃষিবিজ্ঞানী এলমহার্স্টের সহযোগিতায় সুরুল গ্রামে শুরু করলেন স্কুল অফ এগ্রিকালচারের কাজ। এদিকে বিশ্বভারতীর সদ্য-স্নাতকবৃন্দ সমাবর্তনে কবির কাছ থেকে পাচ্ছেন ছাতিম শাখার অভিজ্ঞান; গাছের শ্যামলিমার চিরনূতন রূপ। বনস্পতির বৃহৎ গুঁড়ির মতো সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্বশীল হচ্ছেন, হয়ে উঠছেন স্নেহপ্রবণ শিক্ষাবিদ।

বহুমাত্রিক, বহুমুখী, বহুবর্ণময় রবীন্দ্রনাথের সমস্ত সৃষ্টি, সকল প্রয়াসের মধ্যেই দেশপ্রেম ও রাষ্ট্রবোধ থরেবিথরে সাজানো আছে। এমনকি তাঁর লোকসংস্কৃতি চর্চাতেও। দেশের প্রতি, জাতির প্রতি, দেশজ ঐতিহ্যের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তিনি লোকসংস্কৃতির উপাদান সংরক্ষণ করেছেন। গানে মিলিয়ে দিয়েছেন লোকসংগীতের সুরের মূর্ছনা। উপলব্ধি করেছেন দেশজ সাহিত্যের নিম্নাংশ কীভাবে স্বদেশের মাটির মধ্যে অনেকটা পরিমাণে জড়িয়ে ঢেকে আছে। তাঁর সাহিত্যের মধ্যেও লোকসাহিত্যের কল্পজগত। চেতনার স্তরে রাঙিয়ে নানান খণ্ডচিত্রে উপস্থাপিত লোকসংস্কৃতি। তাঁর শিকড় সংস্কৃতির সরাসরি চর্চার নিদর্শন হচ্ছে লোকসংস্কৃতি বিষয়ক কয়েকটি সরাসরি প্রবন্ধ — ছেলেভুলানো ছড়া, কবিসংগীত এবং গ্রাম্য সাহিত্য।

রবীন্দ্রনাথের জন্ম ও মৃত্যু ব্রিটিশ ভারতে। বিদেশি ঔপনিবেশিক শাসনে থেকেও তাঁর রাষ্ট্রচিন্তার একটি পরিস্কার চিত্র খুঁজে পাওয়া যায়। রাষ্ট্রচিন্তায় তিনি ছিলেন বাস্তবানুগ। তিনি ‘বাহিরের অনুগ্রহে বাহ্য স্বরাজ’ চান নি। বিদেশি শাসকের দাক্ষিণ্য ভিক্ষা চান নি, চেয়েছিলেন জাতীয় আত্মশক্তির উদ্বোধন। স্বরাজ যে সুতো কেটে, খদ্দর পরে, উপদেশের বন্যা বইয়ে সম্ভব নয়, তা তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন। চরকার চালনা তাঁর কাছে ‘যান্ত্রিক’ মনে হয়েছে। এ বিষয়ে গান্ধীজীর সঙ্গে তাঁর প্রবল মতপার্থক্য ছিল। জাতিকে ভেতর থেকে উদ্বোধিত করার জন্য পঞ্চায়েত বিধিব্যবস্থা এবং সমবায় প্রণালী অনুসরণের পক্ষপাতী ছিলেন। তিনি লিখছেন (অগ্রহায়ণ, ১৩৩৬), “আমি প্রথম থেকেই রাষ্ট্রীয় প্রসঙ্গে এই কথাই বারম্বার বলেছি, যে কাজ নিজে করতে পারি সে কাজ সমস্তই বাকি ফেলে, অন্যের উপরে অভিযোগ নিয়েই অহরহ কর্মহীন উত্তেজনার মাত্রা চড়িয়ে দিন কাটানোকে আমি রাষ্ট্রীয় কর্তব্য বলে মনে করি নে।’ ইদানীং বহু মানুষকে দেখা যায়, রাষ্ট্রের জন্য যে কাজটি তিনি চেষ্টা করলে করতে পারেন, তা না করে, যুক্তির পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে রাষ্ট্রবাদী সেজে বসে আছেন। রবীন্দ্রনাথের জীবন ও ভাবনাকে অনুধ্যান করে তাঁরা যদি আপন সামর্থ্যে কিছুটা অগ্রসর হন, তবে তাঁর জন্মদিন পালন সার্থক হয়৷

আরও পড়ুন :  रवीन्द्रनाथ ठाकुर का शिक्षा दर्शन

Facebook Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *